কোলেস্টরল হল এক ধরনের ফ্যাট, যা শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে শরীরে উচ্চমাত্রার খারাপ কোলেস্টরল (LDL) থাকলে এটি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোলেস্টরল কমানোর কিছু প্রাকৃতিক ও জীবনধারাগত উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. সুষম খাদ্য গ্রহণ
কোলেস্টরল কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হল স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ। ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও তেলযুক্ত খাবারে উচ্চমাত্রার ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা খারাপ কোলেস্টরল বাড়ায়। তাই এই খাবারগুলি এড়িয়ে চলা উচিত এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খাদ্যতালিকায় বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, শস্য, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ যেমন স্যামন, সাডিন, ও মাকরেল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এসব খাবার শরীরে ভালো কোলেস্টরল (HDL) বাড়াতে সহায়ক এবং খারাপ কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে।
২. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কার্যকর উপায়। সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি বা উচ্চমাত্রার শারীরিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার অনুশীলন কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে। ব্যায়াম শরীরের ভালো কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়ায় এবং অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে, যা কোলেস্টরল স্তরকে স্থিতিশীল রাখে। ব্যায়ামের পাশাপাশি কিছু যোগ ব্যায়ামও শরীরের হজমপ্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোলেস্টরল কমাতে ভূমিকা রাখে।
৩. তামাক ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা
তামাক ও মদ্যপান কোলেস্টরল বাড়ানোর অন্যতম কারণ। ধূমপান করলে রক্তে অক্সিডাইজড LDL কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ধমনীতে প্ল্যাক জমে গিয়ে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত মদ্যপানও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়ায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করলে রক্তের কোলেস্টরল এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যদি কেউ ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে চান, তবে ধীরে ধীরে এ অভ্যাস ছাড়াই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
অতিরিক্ত ওজন শরীরে কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি বিশেষ করে পেটের চর্বি কোলেস্টরল বাড়ানোর জন্য দায়ী। ওজন কমালে শরীরের কোলেস্টরল স্তর দ্রুত কমে এবং খারাপ কোলেস্টরলের তুলনায় ভালো কোলেস্টরল বৃদ্ধি পায়। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কোলেস্টরল কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ৫-১০% ওজন কমালেও কোলেস্টরলের মাত্রায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায়।
৫. স্ট্রেস কমানো
স্ট্রেসও কোলেস্টরল বৃদ্ধির একটি গোপন কারণ। মানসিক চাপ বাড়লে শরীরে কর্টিসল নামক একটি হরমোনের উৎপাদন বাড়ে, যা কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়ায়। নিয়মিত ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া, সময়মতো কাজের চাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিজেকে মানসিকভাবে ভালো রাখাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
উপসংহার
কোলেস্টরল কমানোর জন্য একটি সুস্থ জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, তামাক ও মদ্যপান পরিহার, ওজন নিয়ন্ত্রণ, এবং মানসিক চাপ কমানো কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এ সব অভ্যাস অনুসরণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করা যায়।